বাংদেশের টাইফয়েড জ্বরের বৈশ্বিক চিত্র
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধ যোগ্য একটি রোগ । দ্রুত রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠা সম্ভব । তথাপি এই রোগে অনেকে অকালে মৃত্যুবরণ করে ।২০১৯ সালে তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ দশ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে থাকে।
এর অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব সাহারান আফ্রিকায় । ২০০০ সাল থেকে তথ্যের বিশ্লেষণ দেখায় যে 1990 সালের তুলনায় বিশ্বে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ কমেছে কিন্তু টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
উন্নত জীবনযাত্রা এবং কার্যকর এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে উন্নত দেশগুলোতে টাইফয়েড জ্বরের ফলে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে এই রোগটি WHO এর আফ্রিকান পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক উন্নয়নশীল এলাকায় একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়েছে।
টাইফয়েড জ্বর হলো একটি সিস্টেমিক সংক্রমণ যা মানব দেহের আশ্রিত প্যাথোজেন সালমোনেনা এন্টারিকা সেরোটাইপ টাইফি দ্বারা সৃষ্ট। টাইফয়েড জ্বরের সংক্রমণ টাইফয়েড সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া উপসর্গ বিহীন বাহক দ্বারা দূষিত পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে এবং পরবর্তী সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টাইফয়েড জ্বরের ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে দরিদ্রতা ঘন জনবসতি অপর্যাপ্ত নিরাপদ পানি অস্বাস্থ্যকর সেনীটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি অবকাঠামো এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস এখন ও ১৫০ কোটির বেশি মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা যেমন ব্যক্তিগত টয়লেট বা ল্যাট্রিন থেকে বঞ্চিত এর মধ্যে ৪১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে যেমন রাস্তার পাশে জলাশয় গুলিতে। ধারণা করা হয় যে বিশ্বের অন্তত ১০% জনসংখ্যা অপরিশোধিত পানি দিয়ে প্রস্তুত খাবার গ্রহণ করে।
বিশ্বে টাইফয়েডে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয় গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিস ২০২১ সালে সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪৭৭৫১৮ জন টাইফয়েড রোগী ছিল বলে ধারণা করা হয় অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৯০ জন রোগী টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ছিল যার মধ্যে ৬১ শতাংশ ছিল পনেরো বছরের কম বয়সী শিশু। বয়স সমন্বয় করার পর এই বয়সে টাইফয়েড রোগের বিস্তারের হার ছিল প্রতি একলাখে ৬৪৯ জন যাকে খুব উচ্চ সংক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অধিকন্ত টাইফয়েডে ৭৯৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই (৫৪৩৮ জন) ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। বাংলাদেশে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী শিশুরা যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে আঞ্চলিকভাবে এবং বৈশ্বিকভাবে ঔষধ প্রতিরোধি টাইফয়েডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
এশিয়া এবং আফ্রিকায় শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর নিয়ে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এবং বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড জ্বরের ক্ষেত্রে আক্রান্তের আনুমানিক হার ছিল ১৪% থেকে ২৯% যা ৫ থেকে ৯ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে ছিল 30% থেকে ৪৪% এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে ছিল 28% থেকে ৫২%।
টিসিবি টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন একটি নিরাপদ কার্যকর এবং নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য WHO দ্বারা সুপারিশকৃত টিকা যা টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বল্প খরচ ও সমন্বিত পদ্ধতির অংশ হিসেবে নিরাপদ পানি স্বাস্থ্যকর সেনিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির সাথে যুক্ত।
https://www.onlineworks24.xyz/2025/09/blog-post_890.html
0 মন্তব্যসমূহ