ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদসমূহের নির্বাচন ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের ছাত্ররাজনীতিতে প্রথম বৃহৎ নির্বাচনী আয়োজন।
ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা, সৃষ্টি এবং জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। নিচে ডাকসু নির্বাচনের বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো—
ডাকসু কী?
পূর্ণরূপ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (DUCSU)
গঠনের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করা।
গঠন: ডাকসুতে ২৫ জন পদ থাকে— সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদ।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৫৩ সালে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে ডাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে।
১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানেও ডাকসুর নেতারা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর কোনো ডাকসু নির্বাচন হয়নি।
সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১১ মার্চ, যা বহু বছর পর হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
ডাকসুর গুরুত্ব
## গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র: শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে।
## নেতৃত্ব তৈরির স্কুল: বাংলাদেশে অনেক জাতীয় নেতা (যেমন শেখ মুজিবুর রহমান, নুরুল আমিন, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আব্দুর রব প্রমুখ) ডাকসুর নেতৃত্ব থেকে উঠে এসেছেন।
## ছাত্র স্বার্থ রক্ষা: আবাসন, ক্যান্টিন, পরিবহন, একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি উত্থাপন।
## জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব: ডাকসুর সিদ্ধান্ত ও আন্দোলন দেশের বৃহত্তর রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে।
২০১৯ সালের নির্বাচন
দীর্ঘ বিরতির পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল অনেক।
ভোটগ্রহণে ছাত্রলীগ বিপুল আসন পায়, তবে স্বাধীন ছাত্রজোটের প্রার্থী নুরুল হক নুর ভিপি নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়, অনেক ছাত্রসংগঠন নির্বাচন বর্জন করে।
তবুও এই নির্বাচন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে আলোচনায় নিয়ে আসে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
২০১৯ সালের পর নতুন নির্বাচন আর হয়নি।
অনেকে মনে করেন, নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন না হওয়া মানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতার কারণে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সবসময় বিতর্ক থাকে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নিয়মিত ও অবাধ ডাকসু নির্বাচন হলে তা জাতীয় নেতৃত্ব গঠনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্যাম্পাসে সহাবস্থান, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ডাকসুর কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও সহিংসতা-মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে ডাকসু আবারও জাতীয় রাজনীতির "নেতৃত্বের আঁতুড়ঘর" হয়ে উঠতে পারে।
নির্বাচনের টাইমলাইন (১৯৫৩–১৯৫৩)
১৯৫৩ সালে প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রসমাজের মধ্যে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া শুরু।
১৯৫৪–১৯৫৭
ডাকসু হয়ে ওঠে ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলনের মূল কেন্দ্র।
১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলনে ডাকসুর নেতারা সামনের সারিতে ছিলেন।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এই সময় ডাকসু কার্যত জাতীয় রাজনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে ডাকসুর নেতারা মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে।
১৯৭৩ স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয়।সরকার–ছাত্র সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে ওঠে।
১৯৭৯ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে ততদিনে জাতীয় রাজনীতিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব প্রকট হয়।
১৯৮৩–১৯৮৭ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ডাকসুর নেতারা ভূমিকা রাখেন।
“স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন”-এর প্রধান ঘাঁটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু।
১৯৯০ গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুর নেতারা (বিশেষ করে আ স ম আব্দুর রব, শেখ ফজলুল হক মনির প্রজন্মের পরবর্তী ছাত্রনেতারা) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।স্বৈরাচার পতনের পর নির্বাচন আর হয়নি।
১৯৯০–২০১৯ দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল।বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হলেও নির্বাচন হয়নি।
২০১৯ (১১ মার্চ)দীর্ঘ বিরতির পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ছাত্রলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও নুরুল হক নুর (স্বাধীন ছাত্রজোট) ভিপি নির্বাচিত হন।নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আলোচনায় আসে।
১৯৫৩–১৯৯০: ডাকসু ছিল জাতীয় আন্দোলনের মূল প্রেরণা।
১৯৯০–২০১৯: নির্বাচন স্থবির ছিল, গণতান্ত্রিক শূন্যতা তৈরি হয়।২০১৯: নতুন সূচনা হলেও বিতর্কিত নির্বাচন।ভবিষ্যতে নিয়মিত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ডাকসু আবার নেতৃত্বের আঁতুড়ঘর হতে পারে।
.jpeg)
0 মন্তব্যসমূহ