Header Ads Widget

Responsive Advertisement

জাসুক নির্বাচনের এগারো হাজার ভোট গুনতে তিন দিন: গণনা নাকি নাটক?


জাসুক নির্বাচনের এগারো হাজার ভোট গুনতে তিন দিন: গণনা নাকি নাটক?



বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই নানা চমক। ভোট হবে, ভোটার যাবে, ব্যালট বাক্স ভরবে, তারপর গণনা হবে—সবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এবার জাসুক নির্বাচনে এমন এক “অসাধারণ” ঘটনা ঘটেছে, যা শুনলে যে কেউ অবাক হবে। মোট ভোট পড়েছে মাত্র ১১ হাজার, অথচ সেই ভোট গুনতে লেগে গেল টানা তিন দিন!

এখন প্রশ্ন হলো—১১ হাজার ভোট গুনতে আসলে কত সময় লাগার কথা? একটু হিসাব করি। একজন কর্মী যদি প্রতি মিনিটে একটি ব্যালট গণনা করেন, তাহলে ঘণ্টায় ৬০টি ভোট গোনা সম্ভব। সেই হিসাবে একজন মানুষের পক্ষে দিনে প্রায় ৭০০–৮০০ ভোট গোনা একেবারেই স্বাভাবিক। অর্থাৎ ১১ হাজার ভোট শেষ করতে একজন মানুষের হাতে লাগবে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। যদি দশজন কর্মী একসাথে কাজ করেন, তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে তিন দিনের এই নাটক কেন?

ভোট গোনার অজুহাত না রাজনৈতিক সমীকরণ?

ভোট গণনায় অস্বাভাবিক দেরি হলে সাধারণত দুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
প্রথমত, অদক্ষতা ও অব্যবস্থা—যারা ভোট গণনার দায়িত্বে ছিলেন তারা হয়তো সঠিকভাবে কাজ করেননি। একবার গোনা হলো, আবার নতুন করে গোনা হলো, কিংবা ব্যালট বক্স ঠিকঠাক মেলানো গেল না—এমন নানা অব্যবস্থার কারণে দেরি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণ—যখন গণনার ফলাফল কারও পছন্দমতো আসছে না, তখন নানা অজুহাতে গণনা ধীর করে দেওয়া হয়। “স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছি” বা “পুনরায় যাচাই করছি”—এই ধরনের অজুহাত দিয়ে আসল উদ্দেশ্য আড়াল করা হয়।

শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ

এত অল্প ভোট গুনতে তিন দিন লাগার বিষয়টি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ মজা করে বলছে—

  • “এরা ভোট না, হয়তো ক্যালকুলাসের জটিল সমীকরণ গুনছে।”
  • “একটা ইউনিভার্সিটির ফাইনাল পরীক্ষার খাতা গোনাও এর চেয়ে দ্রুত শেষ হয়।”
  • “এরা আসলে ভোট নয়, রাজনীতি গুনছে।”

ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা রসিকতা। অনেকেই বলছে, যদি ১১ হাজার ভোট গুনতে তিন দিন লাগে, তবে জাতীয় নির্বাচনের কোটি ভোট গুনতে হয়তো কয়েক মাস লেগে যাবে!

আস্থার সংকট

এমন ঘটনার কারণে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। ভোট গণনায় দেরি হলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগে—ফলাফল কি সত্যিই সঠিকভাবে দেওয়া হলো, নাকি পেছনে অন্য কোনো খেলা চলছে? গণতন্ত্রে ভোট গণনা হওয়া উচিত দ্রুত, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ। অথচ মাত্র ১১ হাজার ভোটের ফলাফলেও যদি তিন দিন লেগে যায়, তাহলে বড় নির্বাচনে আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

উপসংহার

জাসুক নির্বাচনের এই ঘটনা প্রমাণ করে, শুধু ভোট গ্রহণ নয়, ভোট গণনাও বাংলাদেশের রাজনীতির এক নাটকীয় অধ্যায় হয়ে উঠেছে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যেখানে ইভিএম মেশিনে কয়েক মিনিটেই ফলাফল ঘোষণা করা যায়, সেখানে ১১ হাজার ব্যালট হাতে গুনতে তিন দিন লাগা নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ। এটা কি শুধু অব্যবস্থা, নাকি এর আড়ালে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক সমীকরণ?

যে কারণই হোক না কেন, এ ধরনের অস্বাভাবিক দেরি মানুষের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে। গণনা যদি হয় স্বচ্ছ, তবে সময়ক্ষেপণের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যখন ভোট গোনার বদলে রাজনৈতিক সমীকরণ মেলানো হয়, তখনই ১১ হাজার ভোট গুনতে তিন দিন লাগে—এবং মানুষ ভাবে, “এটা ভোট গণনা নয়, এটা আসলে নাটক।”

আরও পড়তে ক্লিক করুন 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ