Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পূর্বাচল৩০০ ফিট রাস্তায় এত দুর্ঘটনা হয় কেন?

 পূর্বাচল৩০০ ফিট রাস্তায় এত দুর্ঘটনা হয় কেন?


ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত সড়কগুলোর মধ্যে একটি হলো ৩০০ ফিট রোড বা প্রগতি সরণি থেকে পূর্বাচলগামী সংযোগ সড়ক। রাজধানী থেকে বিমানবন্দর, পূর্বাচল ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান পথ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। সড়কটি প্রশস্ত এবং আধুনিক মানে তৈরি হলেও প্রায়শই এখানে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন হলো—কেন এই সড়কে এত দুর্ঘটনা ঘটে? এর পেছনে রয়েছে নানা সামাজিক, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কারণ।

অতিরিক্ত গতির প্রবণতা

৩০০ ফিট সড়কটি অনেকটা হাইওয়ের মতো প্রশস্ত। চালকরা মনে করেন এখানে গতি সীমা নেই বা পুলিশ নজরদারি কম। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও বাস চালকরা ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই সড়কে বহু সংযোগ রাস্তা ও গলি রয়েছে। হঠাৎ করে কোনো পথচারী বা গাড়ি প্রবেশ করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি

ঢাকার ভেতরের ব্যস্ত এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল কিছুটা কার্যকর থাকলেও ৩০০ ফিটে সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। ট্রাফিক পুলিশও নিয়মিত থাকে না। ফলে গাড়িচালকরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার না করা, ইউটার্নে হঠাৎ প্রবেশ করা, কিংবা মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো—এসব কারণে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ ঘটছে।

 পথচারীদের অসচেতনতা

এখানে কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও অধিকাংশ পথচারী তা ব্যবহার করে না। তারা রাস্তা পারাপারের সময় দৌড়ে রাস্তা অতিক্রম করতে চায়। দ্রুতগতির গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে তখনই প্রাণহানি ঘটে। অনেক সময় শিশু ও বৃদ্ধরা রাস্তা পার হতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়।

অবৈধ স্টপেজ ও যাত্রী ওঠানামা

বাস, মিনিবাস ও সিএনজি চালকরা নির্দিষ্ট স্টপেজ এড়িয়ে সরাসরি রাস্তায় যাত্রী ওঠানামা করায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করে গাড়ি থেমে যাওয়া বা ব্রেক কষার কারণে পেছনের গাড়ি এসে ধাক্কা মারে। এর ফলে চেইন-অ্যাকসিডেন্টও ঘটে।

ভারী যানবাহনের আধিক্য

দিনের তুলনায় রাতে এই সড়কে কন্টেইনার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মালবাহী লরির সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এসব ভারী যানবাহন চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত থাকে বা ঘুমন্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। ফলে সামান্য অসতর্কতাই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পরিণত হয়।

রাস্তার নকশাগত সমস্যা

যদিও সড়কটি প্রশস্ত, তবে কিছু জায়গায় অপ্রয়োজনীয় বাঁক, অগোছালো ইউটার্ন ও ডিভাইডারের ফাঁক রয়েছে। অনেক সময় হঠাৎ করে রাস্তা সরু হয়ে যায় বা বাজারের কারণে ডান-বাম থেকে লোকজন প্রবেশ করে। এসব কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

ড্রাইভারদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ

ঢাকার অনেক চালক ট্রাফিক আইন মানতে অভ্যস্ত নয়। অনেকেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালায়। কেউ আবার মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে স্টিয়ারিংয়ে বসে। আবার মোটরসাইকেল চালকরা রেসের মতো প্রতিযোগিতা করে চলে, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

 উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

দুর্ঘটনার পরপরই অনেক সময় ভুক্তভোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ভয়াবহ রূপ নেয়। দ্রুত এম্বুলেন্স বা ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়।

সমাধান কী হতে পারে?

প্রথমত, ৩০০ ফিটে নির্দিষ্ট গতি সীমা (Speed Limit) নির্ধারণ করে কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

পর্যাপ্ত ট্রাফিক সিগন্যাল ও ক্যামেরা নজরদারি স্থাপন করতে হবে।

প্রতিটি মোড় ও বাজার এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

অবৈধ স্টপেজ বন্ধ করে নির্দিষ্ট যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভারী যানবাহনের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

চালকদের প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স যাচাই এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

উপসংহার

৩০০ ফিট সড়কটি রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করেছে, তবে অতি দ্রুতগতির কারণে এটি এখন দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্থানে পরিণত হয়েছে। সড়ক ব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগ ও জনগণের সচেতনতা ছাড়া এই প্রবণতা কমানো সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি চালক, পথচারী এবং যাত্রী—সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিরাপদ সড়কই হতে পারে টেকসই নগর জীবনের পূর্বশর্ত।

আরও পড়তে ক্লিক করুন

৩০০ ফিট রোড দুর্ঘটনা

৩০০ ফিট সড়ক নিরাপত্তা

৩০০ ফিট রাস্তায় এত দুর্ঘটনা হয় কেন

ঢাকা ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে দুর্ঘটনা

300 feet road accident Dhaka

Road safety in 300 feet highway


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ