স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি ও ৬ দফা দাবির আন্দোলন
স্বাস্থ্য সহকারীদের মূল ৬ দফা দাবি
১. পদোন্নতি কাঠামো সংশোধন – দীর্ঘদিন চাকরিতে থেকেও পদোন্নতির সুযোগ সীমিত। তারা ন্যায্য গ্রেড ও উন্নত পদোন্নতি চান।
২. ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি – প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা সত্ত্বেও তাদের ঝুঁকি ভাতা খুবই সীমিত। জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ বিবেচনায় এটি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন।
৩. স্থায়ী নিয়োগ ও চাকরির নিশ্চয়তা – অনেকেই চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। তাদের স্থায়ী নিয়োগের দাবি রয়েছে।
৪. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন – আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছেন তারা।
৫. জনবল কাঠামো পুনর্বিন্যাস – বর্তমানে কর্মী সংখ্যা কম থাকায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের দাবি তাদের অন্যতম।
৬. ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পথ সুস্পষ্টকরণ – দীর্ঘদিন চাকরিতে থেকেও স্বাস্থ্য সহকারীদের উচ্চপদে ওঠার পথ অনিশ্চিত। তাই স্পষ্ট ক্যারিয়ার পরিকল্পনা চাচ্ছেন।
কর্মবিরতির প্রভাব
কর্মবিরতি শুরু হওয়ার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি, অর্থাৎ শিশুদের নিয়মিত টিকা প্রদান প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বহু ইউনিয়নে টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ থাকে, ফলে শিশুরা নির্ধারিত সময়ে টিকা পেতে পারেনি। বিশেষ করে হাম, টাইফয়েড ও ডিপথেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি থমকে যায়।
গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীরা গিয়ে প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার অনেক কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও স্বাস্থ্য সহকারীরা বলেন—এটি তাদের বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ, কারণ সরকার দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাবি আমলে নিচ্ছে না।
সরকারের অবস্থান
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরুতে আন্দোলন ভেঙে দিতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে কর্মবিরতির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। সরকারি কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবির কিছু অংশ যৌক্তিক, তবে বাজেট ও প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে সব দাবি তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
জনগণ একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেছে। গ্রামীণ মানুষের ভাষায়—
"আমরা জানি তারা অনেক কষ্ট করে কাজ করেন, কিন্তু তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। তাই তাদের দাবি ন্যায্য।"
আন্দোলনের তাৎপর্য
এই আন্দোলন শুধু একটি পেশাগত দাবি নয়, বরং গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা দুর্বল তা তুলে ধরে। স্বাস্থ্য সহকারীরা যদি তাদের ন্যায্য অধিকার না পান, তবে দেশের টিকাদান কর্মসূচি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
উপসংহার
স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে থাকবে। তারা প্রমাণ করেছেন যে, তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা রাষ্ট্রের জন্য কতটা অপরিহার্য। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের দাবিগুলো নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ, এই দাবি পূরণ শুধু কর্মীদের ন্যায্য অধিকারই নিশ্চিত করবে না, বরং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জাতীয় লক্ষ্য পূরণেও সহায়ক হবে।
পদোন্নতির কাঠামো সংশোধন
ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি
স্থায়ী নিয়োগ ও চাকরির নিশ্চয়তা
প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন
পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ
ক্যারিয়ার পথ সুস্পষ্টকরণ

0 মন্তব্যসমূহ