বিদেশে পড়তে গিয়ে যে ভাবে ভালবাসা হয়
প্রথম দিকে লন্ডনের জীবন বেশ কঠিন ছিল। পড়াশোনার খরচ, পার্ট-টাইম কাজ আর ভাড়ার চাপ—সব মিলিয়ে দম ফেলার ফুরসত ছিল না। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের তাড়না তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।এভাবেই তার সাথে পরিচয় হয় লরা-র, যার বয়স প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই।
লন্ডনের একটি ছোট কফিশপে অরুণ পার্ট-টাইম কাজ করত। লরা ছিলেন সেই কফিশপের একজন নিয়মিত গ্রাহক। এক রোদ ঝলমলে বিকেলে, লরা যখন তার ল্যাপটপে কাজ করছিলেন, অরুণ ভুল করে তার কফির কাপে বেশি চিনি দিয়ে ফেলে। এই সামান্য ভুল থেকেই তাদের প্রথম কথোপকথন শুরু হয়। লরা হাসিমুখে ভুলটা ধরিয়ে দেন এবং অরুণকে তার নতুন জীবনের জন্য উৎসাহিত করেন।
লরা ছিলেন একটি আর্ট গ্যালারির কিউরেটর। তার জীবন, অভিজ্ঞতা এবং দেখার ভঙ্গি অরুণের চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিল। প্রথমদিকে তাদের সম্পর্কটা ছিল শুধুই 'গ্রাহক আর কফি পরিবেশনকারী'-র।কিন্তু প্রতিদিনের টুকরো টুকরো আলাপে তাদের মধ্যে একটা সুন্দর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। অরুণ লরার কাছ থেকে লন্ডনের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনে চলার পথের অনেক ব্যবহারিক শিক্ষা পেত। লরা অরুণের স্বপ্ন, তার পরিবার এবং তার সরলতা দেখে মুগ্ধ হন।
বয়সের এতটা ফারাক এবং ভিন্ন সংস্কৃতি হওয়া সত্ত্বেও, তাদের দুজনের মানসিকতা ও ভাবনা-চিন্তার মধ্যে অদ্ভুত মিল ছিল। অরুণ দেখল, লরা শুধু একজন অভিজ্ঞ মানুষ নন, বরং তিনি তার জীবনে একাকীত্বে ভুগছেন। আর লরার চোখে, অরুণ শুধু একজন তরুণ নয়, বরং তার মধ্যে জীবনের প্রতি এক গভীর আবেগ ও সাহস আছে।
একদিন, অরুণ যখন খুব মানসিক চাপে ছিল কারণ সে ভালো কোনো চাকরি পাচ্ছিল না, তখন লরা তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি শুধু অরুণকে সাহস দেননি, বরং তার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাকে একটি ছোট ফার্মে ইন্টারভিউয়ের সুযোগ করে দেন। সেই দিন রাতে টেমস নদীর পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে অরুণ বুঝতে পারে, লরা শুধু তার ভালো বন্ধু নয়, তার জীবনের এক অপরিহার্য অংশ।
এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়, অরুণ নিজের বাঙালি লাজুকতা ভুলে লরাকে তার হৃদয়ের কথা জানায়। অরুণ বলে, "আমার কাছে বয়স বা দেশের সীমারেখা অর্থহীন। আমি শুধু তোমার সঙ্গে থাকতে চাই, লরা।" লরা প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করেন, কারণ সমাজের চোখে এই সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু অরুণের চোখে তিনি যে ভালোবাসা দেখতে পেলেন, তাতে সব দ্বিধা কেটে গেল। লরা হাসলেন, "তুমি কি জানো, আমার মনে হচ্ছিল তুমি কখনোই বলবে না?"
তাদের সম্পর্ক ছিল পুরনো ওয়াইনের মতো—যত দিন গড়িয়েছে, তত গভীর হয়েছে। অরুণ তার লেখাপড়া শেষ করে এখন একটি ভালো চাকরি পেয়েছে। আর লরা এবং অরুণের সেই ভিন্ন সংস্কৃতির বন্ধন লন্ডনের বুকে এক নতুন ভালোবাসার গল্প তৈরি করেছে। অরুণ বুঝেছে, শিক্ষার খোঁজে বিদেশ এলেও, সে আসলে ভালোবাসার এক নতুন পৃথিবী খুঁজে পেয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ