১৯৭১ সালে কারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল মূলত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় কিছু গোষ্ঠী। এদের ভূমিকা ছিল স্বাধীনতাকামী জনগণকে দমন করা, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতনসহ ব্যাপক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করা। প্রধান গোষ্ঠীগুলো ছিলঃ
১. পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ ১৯৭১ “অপারেশন সার্চলাইট” শুরু করে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে গণহত্যা চালায়।মুক্তিকামী বাঙালিদের দমন করার জন্য ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও গ্রাম ধ্বংস করে।
২. রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় তৈরি হয়।মূল কাজ ছিল মুক্তিকামী গ্রাম বা এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করা, মুক্তিকামীমানুষদের খুঁজে বের করে হত্যা করা।
৩. আলবদর বাহিনী মূলত জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন থেকে গঠিত।এরা বুদ্ধিজীবী হত্যায় বিশেষভাবে কুখ্যাত। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ দেশের বহু নামকরা বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।
৪. আলশামস বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের সাথে থেকে গ্রামাঞ্চলে দমননীতিতে অংশ নেয়।মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর দমন চালানো ছিল তাদের কাজের অংশ।
৫. শান্তি কমিটি পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদ ও নেতাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন।এরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খবর দেয়া এবং পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করত।
৬. কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও নেতা তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রমুখ দলের অনেক নেতা প্রকাশ্যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করে।সংক্ষেপে, পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি এবং কিছু পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক নেতাই ছিল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করা প্রধান শক্তি।
🇵🇰 পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় "অপারেশন সার্চলাইট"-এর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়।সারা দেশে গ্রাম পোড়ানো, নারী ধর্ষণ, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করে।
রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের স্থানীয় সহযোগী বাহিনী।মুক্তিকামী গ্রাম বা এলাকায় সেনাদের দিকনির্দেশনা দিত।যারা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে আশ্রয় দিত, তাদের ধরে হত্যা বা নির্যাতন করত।উদাহরণ: খুলনা, যশোর, কুমিল্লা অঞ্চলে রাজাকাররা বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল।
আলবদর বাহিনী মূলত জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন থেকে তৈরি।বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য সবচেয়ে কুখ্যাত।১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুরে বহু বুদ্ধিজীবী যেমন—ড. মুনীর চৌধুরী, ড. জাফর খান, সাংবাদিক শাহিদুল্লাহ কায়সারসহ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে।
আলশামস বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের সহায়ক বাহিনী, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় ছিল।মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর হামলা, গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া, মানুষ হত্যা ছিল এদের কাজ।বরিশাল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে এরা সক্রিয় ছিল।
শান্তি কমিটি পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদ ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে গঠিত।মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করতে সাহায্য করত।পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে প্রচার চালাত, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করত।অনেক এলাকায় শান্তি কমিটি আসলে স্থানীয় মানুষ দমনের "ইন্টেলিজেন্স শাখা" হিসেবে কাজ করত।
পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক নেতারা জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দলের অনেক নেতা প্রকাশ্যে পাকিস্তান সমর্থন করে।অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজাকার, আলবদর গঠনে ভূমিকা রাখে।
অর্থাৎ, পাকিস্তানি সেনা ছিল মূল আক্রমণকারী শক্তি আর তাদের হাতিয়ার ছিল রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদেরা। এরা মিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছিল।
0 মন্তব্যসমূহ