ফিলিস্তিনে ইজরাইল রাষ্টের প্রবেশ
ইস্রায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাস একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফল, যা প্রাচীন কালের ইহুদি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস থেকে শুরু হয়ে আধুনিক সময়ে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের পর্যায়ে এসেছে। এখানে বিস্তারিতভাবে সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করা হলো:
১. প্রাচীন যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ~2000–70)
-
ইস্রায়েলের ইতিহাস প্রায় ৪,০০০ বছর পূর্বে ক্যানান (বর্তমান ইস্রায়েল ও ফিলিস্তিনের এলাকা) থেকে শুরু।
-
প্রাচীন ইহুদিরা মোসেসের নেতৃত্বে মিশর থেকে বেরিয়ে এসে কানানের ভূমিতে বসতি স্থাপন করে।
-
প্রাচীন সময়ে ইহুদিদের মধ্যে “যিহুদা রাজ্য” ও “ইস্রায়েল রাজ্য” গঠিত হয়।
-
খ্রিস্টপূর্ব 6–7 শতকে ব্যাবিলনীয় বিজয় ও নির্বাসন ঘটে।
-
খ্রিস্টপূর্ব 70 সালে রোমান সাম্রাজ্য ইহুদিদের দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংস করে এবং ইহুদিদের ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয় (ডায়াসপোরা)।
২. মধ্যযুগ ও অট্টোমান আমল (70–1917)
-
মধ্যযুগে ইহুদিরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত ইউরোপে।
-
১৯ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপে জুদি সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক বৈষম্য ও হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে সিয়নবাদ আন্দোলন শুরু হয়।
-
১৮৯৭ সালে থিওডর হার্জেলের নেতৃত্বে প্রথম সিয়নিস্ট কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় মাতৃভূমি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
৩. ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ও আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি (1917–1948)
-
১৯১৭ সালে ব্যালফোর ঘোষণা প্রকাশিত হয়, যা ব্রিটিশ সরকারের মাধ্যমে ইহুদিদের জন্য প্যালেস্টাইনে জাতীয় ঘরনের অনুমোদন দেয়।
-
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা প্যালেস্টাইনে বৃদ্ধি পায়।
-
প্যালেস্টাইন আরবদের সঙ্গে সংঘর্ষ দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বহুকালীন ইস্রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের শুরু।
৪. ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা (1948)
-
১৪ মে ১৯৪৮ সালে ডেভিড বেঙ্গুরিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী করে ইস্রায়েল রাষ্ট্র স্বাধীন ঘোষণা করে।
-
এ ঘটনার পরপরই চারটি আরব রাষ্ট্র (মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক) ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যা ইস্রায়েল-আরব যুদ্ধ ১৯৪৮ নামে পরিচিত।
-
যুদ্ধের পর ইস্রায়েল নিজের ভূখণ্ড সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়, আর অনেক প্যালেস্টাইনি শরণার্থী পাশের আরব দেশে চলে যায়।
৫. পরবর্তী যুদ্ধ ও ভূরাজনীতি
-
১৯৫৬: সুয়েজ সংকট।
-
১৯৬৭: ছয় দিনের যুদ্ধ; ইস্রায়েল পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, গোলান উচ্চভূমি ও সিনা উপদ্বীপ দখল করে।
-
১৯৭৩: ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ; আরব দেশগুলো ইস্রায়েলকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে।
-
১৯৭৯: মিসর ও ইস্রায়েলের মধ্যে শান্তি চুক্তি।
৬. সাম্প্রতিক ইতিহাস
-
১৯৯৩ সালে ওসলো চুক্তি: ইস্রায়েল-প্যালেস্টাইন শান্তি প্রক্রিয়া শুরু।
-
ইস্রায়েল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্র হলেও, পশ্চিম তীর ও গাজা অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
-
প্রযুক্তি, অর্থনীতি, ও সামরিক ক্ষেত্রে ইস্রায়েল বিশ্বের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
ইস্রায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাস প্রাচীন ধর্মীয়, রাজনৈতিক, ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। প্রাচীন ইহুদিরা থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া, ব্রিটিশ ম্যান্ডেট, আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক ভূরাজনীতি—সব মিলিয়ে এটি একটি জটিল ইতিহাস
ফিলিস্তিনে ইজরাইল রাষ্টের প্রবেশ বিস্তারিত ইতিহাস
ফিলিস্তিনে ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রবেশ এবং ইতিহাস অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল। এটি মূলত আধুনিক যুগের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত সংঘাতের ফল। এখানে chronological (কালক্রমিক) ভিত্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ব্রিটিশ ম্যান্ডেট যুগ (1917–1947)
১৯১৭ সালে ব্যালফোর ঘোষণা: ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় ঘর তৈরি করার প্রস্তাব দেয়।
১৯২০–৪০: ইউরোপে উসপত্রিত ইহুদিরা ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন শুরু করে।স্থানীয় আরবরা এই ইহুদি বসতি বিস্তারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।এই সময়ে আঞ্চলিক সহিংসতা এবং ধর্মীয় দাঙ্গা শুরু হয়, যা পরবর্তী সংঘাতের ভিত্তি তৈরি করে।
২. জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনা (1947)
জাতিসংঘ ১৯৪৭ সালে প্যালেস্টাইনকে দুইটি রাষ্ট্রে বিভাজনের প্রস্তাব দেয়: ইহুদি রাষ্ট্র ও আরব রাষ্ট্র।ইহুদিরা এটি গ্রহণ করে, আরব রাষ্ট্রসমূহ এবং প্যালেস্টাইন আরবরা প্রত্যাখ্যান করে।
৩. ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও প্রথম আরব–ইস্রায়েল যুদ্ধ (1948–1949)
১৪ মে ১৯৪৮: ডেভিড বেঙ্গুরিয়ান ইস্রায়েল স্বাধীন ঘোষণা করেন।একই দিনে চারটি আরব দেশ (মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক) যুদ্ধ ঘোষণা করে।ইস্রায়েল যুদ্ধ জয়ী হয় এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্যালেস্টাইন অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে।প্রায় ৭ লক্ষ প্যালেস্টাইনি শরণার্থী পাশের আরব দেশে চলে যায়।
৪. ১৯৬৭-এর ছয় দিনের যুদ্ধ
জর্ডান, মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কারণে ইস্রায়েল পূর্বাঞ্চলীয় গাজা, পশ্চিম তীর, গোলান হিলস ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে।এ যুদ্ধের ফলে প্যালেস্টাইনের ভূখণ্ডের অনেকাংশ ইস্রায়েলের নিয়ন্ত্রণে আসে।
৫. ১৯৭০–১৯৯০ যুগ
১৯৭৯: মিসরের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর।প্যালেস্টাইনের ভূখণ্ডের ওপর ইস্রায়েলের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় হয়।এই সময়ে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) এবং অন্যান্য গ্রুপ সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক স্বীকৃতি দাবী করে।
৬. ১৯৯৩–বর্তমানওসলো চুক্তি (1993): ফিলিস্তিন স্বায়ত্তশাসন লাভ করে, কিন্তু পুরোপুরি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।ইস্রায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে।
গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের মধ্যে নিয়মিত সংঘাত চলেছে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইস্রায়েলের বসতি প্রসারণকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করে।
সারসংক্ষেপ
ফিলিস্তিনে ইস্রায়েল রাষ্ট্রের প্রবেশ মূলত:ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ও সিয়নিস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু।জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনা এবং ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে তীব্র সংঘাতে পরিণত।পরবর্তী যুদ্ধ এবং বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে আজকের ইস্রায়েল-প্যালেস্টাইন রাজনৈতিক ভূ-চিত্র গড়ে ওঠে।
0 মন্তব্যসমূহ