Header Ads Widget

Responsive Advertisement

প্রেম, পর্দা আর অশ্রু : সালমান শাহ, শাবনূর ও সামিরার কাহিনী

 প্রেম, পর্দা আর অশ্রু : সালমান শাহ, শাবনূর ও সামিরার কাহিনী

ঢাকাই সিনেমার সোনালি দিনে আলো ছড়াচ্ছিলেন এক তরুণ নায়ক—সালমান শাহ। তার হাসি, চোখের চাহনি আর অভিনয়ের মায়ায় পুরো জাতি যেন ডুবে গিয়েছিল। সিনেমার পর্দায় তিনি ছিলেন প্রেমিক, স্বপ্নবাজ তরুণ, আবার কখনো বিদ্রোহী। কিন্তু পর্দার বাইরেও তার জীবন ছিল নাটকীয়, ছিল দ্বন্দ্ব আর অশেষ গুঞ্জনে ভরা।

পর্দার প্রেম—সালমান ও শাবনূর

১৯৯৩ সালে কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে যাত্রা শুরু। তার সঙ্গে শাবনূরের জুটি যেন আকাশে লেখা এক গল্প। সিনেমা হলে দর্শকরা হাততালি দিয়ে বলতেন—“এরা তো একে অপরের জন্যই জন্মেছে।” একসাথে তারা গড়েছেন অসংখ্য সুপারহিট ছবি। প্রেমের গান, দৃষ্টির বিনিময়, আবেগ—সবকিছুই এত বাস্তব মনে হতো যে, ভক্তরা বিশ্বাস করতেন, বাস্তব জীবনেও তারা প্রেমে আবদ্ধ।

বাস্তবের বাঁধন—সামিরা

কিন্তু পর্দার বাইরে সালমান শাহ ছিলেন সংসারী মানুষ। তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সামিরাকে। সামিরা ছিলেন পড়াশোনা জানা, ভিন্ন পরিবেশের মেয়ে। একসাথে স্বপ্ন বুনেছিলেন সংসারের, সুখের জীবনের। কিন্তু এই সংসার কখনোই ছিল না শান্তির। একদিকে চলচ্চিত্রের আলো ঝলমল দুনিয়া, অন্যদিকে সংসারের টানাপোড়েন—সালমানকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল দুই ভিন্ন জগতে।

ত্রিভুজের সূচনা

সালমানের সঙ্গে শাবনূরের পর্দার জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছিল, তেমনি বেড়ে যাচ্ছিল গুঞ্জন। মিডিয়া, ভক্ত, এমনকি কাছের মানুষও ফিসফিস করে বলত—“শাবনূর শুধু সিনেমার নায়িকা নন, তিনি হয়তো সালমানের মনেও জায়গা করে নিয়েছেন।” সামিরা এই গুঞ্জনে কষ্ট পেতেন, সন্দেহ করতেন। সংসারে কলহ বাড়ত, আর বাইরে সালমানকে ঘিরে প্রেমের গল্প আরও উসকে যেত।

অশান্তির ছায়া

একদিকে স্ত্রী সামিরা, অন্যদিকে সহশিল্পী শাবনূরের প্রতি মানুষের কল্পিত প্রেম—সালমান শাহর জীবনে চাপ তৈরি করছিল প্রবলভাবে। সিনেমায় তিনি ছিলেন স্বপ্নপুরুষ, কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন এক অস্থির মানুষ, যিনি হয়তো বারবার ভেবেছেন কোন পথটা সঠিক। বন্ধুরা বলত, তিনি হাসতেন, মজা করতেন, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বয়ে বেড়াতেন অদৃশ্য কষ্ট।

আকস্মিক মৃত্যু

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের সকাল। হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ল—সালমান শাহ আর নেই। পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে গেল। ভক্তরা বিশ্বাস করতে পারছিল না। অনেকে বলল আত্মহত্যা, আবার কেউ বলল হত্যা। সেই সঙ্গে শুরু হলো নতুন বিতর্ক—তার মৃত্যুর পেছনে কি পারিবারিক অশান্তি দায়ী? নাকি প্রেমঘটিত টানাপোড়েন?

পরবর্তী অধ্যায়

সালমানের মৃত্যুর পর সামিরা হয়ে গেলেন একা। সমাজের তির্যক প্রশ্ন তাকে আঘাত করতে লাগল। অন্যদিকে শাবনূর বারবার বললেন—“আমাদের সম্পর্ক ছিল কেবল বন্ধুত্ব ও কাজের।” কিন্তু মানুষ কি বিশ্বাস করল? না। আজও ভক্তরা মনে করে, সালমান-শাবনূরের প্রেম সত্যিই ছিল, যদিও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অসমাপ্ত গল্প

সময় পেরিয়ে গেছে বহু বছর। কিন্তু এখনো যখন কেউ সালমান শাহর নাম নেয়, তখন সঙ্গে চলে আসে শাবনূরের কথা, আসে সামিরার নামও। এ যেন এক ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী—যেখানে সত্য-মিথ্যা, অভিযোগ-অভিমান আর রহস্য একসাথে জড়িয়ে আছে।

সালমান শাহর জীবনের এই অধ্যায় কোনো চলচ্চিত্রের চেয়ে কম নাটকীয় নয়। হয়তো তিনি যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে সত্যিকার গল্পটা সবাই জানতে পারত। কিন্তু আজ তা থেকে গেছে শুধু রহস্যে মোড়া এক উপন্যাসের মতো—যেখানে ভালোবাসা আছে, ত্যাগ আছে, আর আছে এক অশ্রুমাখা সমাপ্তি।

আরও পড়তে ক্লিক করুন 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ