রূপগঞ্জে মাদকের বিস্তার: ভয়াবহ সামাজিক সংকট
নারায়ণগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা রূপগঞ্জ একসময় ছিল শিল্প, শিক্ষা ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই উপজেলার নানা এলাকায় মাদকের বিস্তার এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যুব সমাজ ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, আর পরিবার ও সমাজে নেমে আসছে অশান্তির ছায়া। মাদকের সহজলভ্যতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা এবং সামাজিক অবক্ষয় এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মাদকের উৎস ও বিস্তার
রূপগঞ্জে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে মূলত বিভিন্ন অন্ধকার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ঢাকার খুব কাছেই হওয়ায় এই উপজেলা হয়ে উঠেছে মাদক পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। কাচপুর, গোলাকান্দাইল, ভুলতা, মুড়াপাড়া, ভোলাব এবং কাঞ্চন এলাকার কিছু জায়গায় গোপনে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, আইসসহ নানা ধরনের মাদক বিক্রি হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অনেকে নিজের ঘরবাড়িতেই মাদক সেবন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে।
বিশেষ করে বেকার যুবকদের টার্গেট করে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদেরকে গ্রাহক ও সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবহার করছে। অনেক সময় মোটরসাইকেল বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও মাদক পাচারের খবর পাওয়া যায়। এভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রূপগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মাদক ছড়িয়ে পড়েছে।
সামাজিক প্রভাব
মাদকের প্রভাবে রূপগঞ্জের সামাজিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই কর্মজীবন থেকে সরে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাই, চুরি, মারামারি ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ বাড়ছে মাদকের কারণে। অনেক পরিবার তাদের সন্তান হারিয়েছে মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতিতে। কেউ কেউ জেলে, কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
বিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এখন মাদকের টানে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। তাদের হাতে যখন বই থাকার কথা, তখন অনেকেই আসক্তির কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে। এতে শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজই ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আইন প্রয়োগ ও প্রশাসনিক উদ্যোগ
রূপগঞ্জে প্রশাসন একাধিকবার মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে। মাঝে মধ্যে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ইয়াবা, গাঁজা, আইসসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয় এবং অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু আইনি জটিলতা ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
অনেক সময় দেখা যায়, মাদক বিক্রেতারা ধরা পড়লেও অল্প সময়ের মধ্যেই জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার আগের কাজে ফিরে যায়। এর ফলে সাধারণ মানুষও হতাশ হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন ও মসজিদভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি খুব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমাধানের পথ
রূপগঞ্জে মাদক সমস্যা সমাধানের জন্য শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, সামাজিক ও শিক্ষামূলক উদ্যোগও জরুরি।
১. পরিবারের ভূমিকা: অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের আচরণ, বন্ধু ও চলাফেরার প্রতি নজর রাখা।
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: স্কুল-কলেজে নিয়মিত মাদকবিরোধী আলোচনা ও কর্মশালা আয়োজন করা প্রয়োজন।
৩. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: মসজিদ, মন্দির, ক্লাব—সব জায়গায় সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
৪. কঠোর আইন: মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।
উপসংহার
রূপগঞ্জে মাদকের বিস্তার শুধু একটি আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক ও মানবিক বিপর্যয়। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে যাবে। প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও একযোগে কাজ করতে হবে। মাদকমুক্ত রূপগঞ্জ গড়াই হতে পারে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ নির্মাণের প্রথম ধাপ।
আরও পড়তে ক্লিক করুন
কীওয়ার্ড: রূপগঞ্জে মাদক, মাদকবিরোধী অভিযান, নারায়ণগঞ্জ মাদক সমস্যা, রূপগঞ্জ যুব স
মাজ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক অবক্ষয়।
রূপগঞ্জে মাদকের বিস্তার: ভয়াবহ সামাজিক সংকট
নারায়ণগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা রূপগঞ্জ একসময় ছিল শিল্প, শিক্ষা ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই উপজেলার নানা এলাকায় মাদকের বিস্তার এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যুব সমাজ ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, আর পরিবার ও সমাজে নেমে আসছে অশান্তির ছায়া। মাদকের সহজলভ্যতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা এবং সামাজিক অবক্ষয় এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মাদকের উৎস ও বিস্তার
রূপগঞ্জে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে মূলত বিভিন্ন অন্ধকার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ঢাকার খুব কাছেই হওয়ার কারণে এই উপজেলা হয়ে উঠেছে মাদক পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। কাচপুর, গোলাকান্দাইল, ভুলতা, মুড়াপাড়া, ভোলাব ও কাঞ্চন এলাকার কিছু জায়গায় গোপনে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, আইসসহ নানা ধরনের মাদক বিক্রি হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। অনেকে নিজের
.jpeg)
0 মন্তব্যসমূহ