Header Ads Widget

Responsive Advertisement

আকাশে উড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে চীনের ঘুড়ি: নবায়নযোগ্য শক্তিতে নতুন দিগন্ত

 

আকাশে উড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে চীনের ঘুড়ি: নবায়নযোগ্য শক্তিতে নতুন দিগন্ত



চীন বর্তমানে “উচ্চ-উড়ন্ত বায়ু শক্তি” (High-altitude Wind Energy) বা “Airborne Wind Energy (AWE)” প্রযুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা এমন একটি বিশাল ঘুড়ি তৈরি করেছে, যা বাতাসের গতিশীল শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, এবং এতে প্রচলিত টারবাইন পদ্ধতির তুলনায় বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।

প্রকল্পের সারাংশ

সম্প্রতি চীনের ইনর মঙ্গোলিয়া (Inner Mongolia) অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে ৫,০০০ বর্গমিটার (sq.m) আকারের একটি “পাওয়ার-জেনারেটিং ঘুড়ি” আকাশে ছুড়ে দেখা গেছে।

এই ঘুড়ি হেলিয়াম বেলুন বা কাঁটাচামচের মতো প্যারাসুট আকৃতির প্ল্যাটফর্ম দ্বারা আকাশে উঠানো হয়েছে।

ঘুড়িটিকে নিচের দিকে একটি দড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে; দড়িটি মাটিতে জেনারেটরের সঙ্গে যুক্ত। যখন ঘুড়ি বাতাসে টেনে দড়িটি টান সৃষ্টি করে, সেই টানেই জেনারেটর ঘোরে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

পরীক্ষার সময় ঘুড়িটি প্রায় ৩০০ মিটার (প্রায় ৯৮৪ ফুট) উচ্চতায় সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছিল।

একসাথে পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় একাধিক ঘুড়ি: একটি বড় ৫,০০০ বর্গমিটার ঘুড়ি এবং দুইটি ১,২০০ বর্গমিটার ঘুড়ি।

চীনের এই প্রজেক্টটি “ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট” প্রকল্প হিসেবে রয়েছে, যা দেশটির শক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি উদ্যোগের অংশ।

প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা

পৃথিবীর নিচে টারবাইনের তুলনায় জমির ব্যবহার কমায়
প্রচলিত উইন্ড টারবাইন স্থাপন করার জন্য অনেক জমি লাগে—বড় টাওয়ার, ব্লেড এবং ভিত্তি প্রয়োজন। কিন্তু ঘুড়ি ভিত্তিক আকাশীয় পদ্ধতিতে এমন নামে-মাটির যান্ত্রিক অবকাঠামো অনেক কম হবে, ফলে ভূমির ব্যবহার অনেক কমে যায়। চীনের তথ্য অনুযায়ী, এই ঘুড়ি পদ্ধতি জমি প্রায় ৯৫% পর্যন্ত সেভ করতে পারে।

স্টিল ও কাঠামোগত উপাদান সাশ্রয়
প্রচলিত টারবাইনের কাঠামোগত অংশে স্টিল ও কংক্রিটের বড় অংশ লাগে। কিন্তু আকাশে ঘুড়ি-ভিত্তিক পদ্ধতি বড় টাওয়ার বা চাকার জায়গায় হালকা লাইটওয়েট ফ্লাইং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, যার ফলে স্টিল ও কন্ট্রাকশন উপাদান প্রায় ৯০% পর্যন্ত কম লাগতে পারে। চীনের সোর্স অনুযায়ী।

কম ব্যয়, বেশি দক্ষতা
গণনা করা হয়েছে যে একজন ১০ মেগাওয়াট-ক্ষমতার সিস্টেম (কাউন্টিং ঘুড়ি ও গ্রাউন্ড স্টেশন) বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা (kWh) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে—যা প্রায় ১০,০০০ পরিবারকে এক বছরের জন্য চালাতে পারবে।

এছাড়া, ঘুড়ি পদ্ধতির এক লাভ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল খরচ কমে আসার সম্ভাবনা। চীনের রিপোর্ট অনুযায়ী এই পন্থায় উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০% কম হতে পারে সাধারণ স্থলভিত্তিক উইন্ড টারবাইন পদ্ধতির তুলনায়।

উচ্চ বাতাস গতি ও ঘনত্ব
আকাশে, বিশেষ করে ২০০-৩০০ মিটার উপরের অংশে বাতাস অনেক বেশি গতিশীল, বেশি নিরবিচল এবং শক্তি ঘনত্ব অনেক বেশি। এর ফলে এ অঞ্চলে শক্তি “আলােভেল” (উপলব্ধ শক্তি) প্রচুর, যা একটা বড় সুযোগ। ঘুড়ি-ভিত্তিক সিস্টেম এই অংশ ব্যবহার করতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিসমূহ

এই প্রযুক্তি যতই প্রতিশ্রুতিশীল হোক, তবুও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা: এমন বড় ঘুড়ি-প্ল্যাটফর্মকে এমন জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে এটি ঝড়, বাতাস পরিবর্তন, বা বাতাসের দিক বদলায়েও টান-লড়াই করতে পারে না। দড়ির টান কমবেশি হলে, সিস্টেমে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

উপাদান ক্লান্তি (fatigue): দড়ি বা অন্তর্বাহিত উপাদান বারবার টানায় ক্লান্তি বা ক্ষয় হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে।

 সেফটি: আকাশে উড়ন্ত বড় ঘুড়ি যদি দুর্ঘটনায় আঘাত খায় বা দড়ি ছিঁড়ে যায়, সেটি নীচে নেমে মানুষের জন্য বিপদ তৈরি করতে পারে।

কমার্শিয়াল স্কেল-আপ: পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সফলতা পাওয়া গেলেও, এটি বাণিজ্যিকভাবে বড় স্কেলে চালু করতে হলে অনেক বিনিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট নকশা দরকার।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও গুরুত্ব

চীনের এই প্রকল্প যদি সফলভাবে বাণিজ্যিক মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে এটি নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কারণ:

এটি জমি সংরক্ষণে সহায়ক: প্রায় ৯৫% জমি সাশ্রয় করা যায়, যা ভূমিহীন বা ঘনবসতিপ্রবণ এলাকায় একটি বড় প্লাস।

খরচ কমিয়ে দেয়: স্টিল ও কংক্রিট কম লাগার কারণে নির্মাণ ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমে আসতে পারে।

বিস্তৃত ব্যবহার: পাহাড়ি অঞ্চল, গ্রামীণ এলাকা বা এমন জায়গায় যেখানে বড় উইন্ড টারবাইন বসানো সম্ভব না, সেখানে এমন ঘুড়ি-ভিত্তিক সিস্টেম কার্যকর হতে পারে।

পরিবেশগত প্রভাব: কম ভূমি ব্যবহার, কম কাঁচামাল ও স্থায়ীভাবে শক্তি উৎপাদনের কারণে পরিবেশে তার প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।

সমাপ্তি কথা

চীনের এই “উড়ন্ত ঘুড়ি” প্রকল্প শুধু পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি নয় — এটি নবায়নযোগ্য শক্তিকে আরও উন্নত ও টেকসই পথে এগিয়ে নেওয়ার একটি যারাসম্ভাবনাময় উদাহরণ। বাতাসের সেই অংশ, যা সাধারণ টারবাইন দিয়ে অন্বেষণ করা যায় না, সেখানে শক্তি সংগ্রহ করেই চীন এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ার পরিকল্পনা করছে, যেখানে কম জায়গায়, কম উপাদানে এবং কম শক্তি ব্যয়ে শক্তির উৎপাদন সম্ভব হবে।

তবে পথটি কঠিন: প্রযুক্তিগত ঝুঁকি, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও বাণিজ্যিক স্কেল-আপ বড় বাধা। কিন্তু সফল হলে, এই প্রযুক্তি হবে নবায়নযোগ্য শক্তির এক নতুন দিগন্ত — এবং চীন তা প্রথম হিসেবে রূপায়ণ করতে পারে।

আরও পড়তে ক্লিক করুন



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ