Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গাজা শহরের দুই বছরের যুদ্ধ: এক ভূতুড়ে নগরের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা

 গাজা শহরের দুই বছরের যুদ্ধ: এক ভূতুড়ে নগরের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা



দুই বছরের অবিরাম যুদ্ধ গাজা উপত্যকাকে আজ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীকে পরিণত করেছে। একসময় প্রাণচঞ্চল গাজা শহর—যেখানে স্কুল, হাসপাতাল, বাজার আর শিশুদের হাসির শব্দে ভরে থাকত—আজ তা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অবিরাম বোমা হামলা, অবরোধ, খাদ্য ও জ্বালানির সংকটে এই শহর এখন পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও শান্তির কোনো লক্ষণ নেই। এই সময়ের মধ্যে গাজা উপত্যকার অধিকাংশ অঞ্চলই ধ্বংসপ্রাপ্ত। জাতিসংঘের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশ ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। শহরজুড়ে ধ্বংসস্তূপ, পোড়া ভবন, এবং মৃত্যু ও ক্ষুধার গন্ধ ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।

মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ চিত্র

গাজার পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একে “বসবাসের অনুপযোগী শহর” বললেও অত্যুক্তি হবে না। হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগই ভেঙে পড়েছে বা বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবে কার্যত অচল হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা মোমবাতির আলোতে অস্ত্রোপচার করছেন, কারণ বিদ্যুতের জোগান নেই। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক ওষুধ, অক্সিজেন কিংবা ব্যান্ডেজ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।

খাদ্যের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষই এখন অনাহার বা অপুষ্টিতে ভুগছে। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অনেক মা তাদের সন্তানকে খাওয়াতে গিয়ে নিজে না খেয়ে থাকে। পানি ও জ্বালানি সংকটে রান্না করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দূষিত পানিই এখন অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ভরসা।

ধ্বংসস্তূপে শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ হারিয়ে গেছে

গাজা শহরের স্কুলগুলো হয় ধ্বংস হয়ে গেছে, নয়তো আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। হাজার হাজার শিশু শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের ছোট্ট জীবনে এখন যুদ্ধের শব্দ, আতঙ্ক, ক্ষুধা ও মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই। এক সময় যারা ডাক্তার, শিক্ষক বা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখত, তারা এখন কেবল বাঁচার স্বপ্নই দেখে।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, দুই বছরে গাজায় মারা গেছে প্রায় ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে কয়েক লাখ। বহু পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে—কোনো ঘর নেই, কোনো ঠিকানা নেই। যাদের বেঁচে থাকা মানে কেবল ধ্বংসাবশেষে ঘুরে বেড়ানো, প্রিয়জনদের স্মৃতি খোঁজা।

অবরোধ ও আন্তর্জাতিক নীরবতা

গাজার মানুষ শুধু যুদ্ধের আগুনে নয়, দীর্ঘদিনের অবরোধেও পিষ্ট। ইসরায়েল ও মিশরের সীমান্ত বন্ধ থাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন। অল্প কিছু সাহায্য ঢুকলেও তা চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। বড় দেশগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে বিভক্ত—ফলে নিরীহ মানুষই হচ্ছে বলি।

জাতিসংঘ, রেড ক্রস ও নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় “মানবতার বিপর্যয়” ঘোষণা করেছে। তবুও যুদ্ধ থামছে না। বরং আরও নতুন করে হামলা, প্রতিশোধ আর ধ্বংসের চক্র চলছে। গাজার আকাশে প্রতিদিনই বোমার শব্দ, ভূমিতে কান্না আর মরদেহের সারি—এই চিত্র যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

গাজার অর্থনীতি ও পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

যুদ্ধের আগে গাজার অর্থনীতি সীমিত হলেও টিকে ছিল। ছোট ছোট কারখানা, মাছধরা, কৃষি, ও ব্যবসা ছিল মানুষের জীবিকা। কিন্তু এখন সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজায় বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই, ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পণ্য আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ থাকায় বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। এমনকি সিমেন্ট বা লোহা পাওয়া যায় না—ফলে পুনর্গঠনের কাজও শুরু করা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কমপক্ষে ২৫ বছর সময় লাগবে—যদি যুদ্ধ আজই বন্ধ হয়। কিন্তু যুদ্ধ এখনো চলছে, ধ্বংসও অব্যাহত।

আশার আলো এখনও নিভে যায়নি

তবুও গাজার মানুষ হাল ছাড়েনি। তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও বাঁচার চেষ্টা করছে। শিশুরা ইট-পাথরের ভেতর লুকিয়ে খেলছে, কেউ কেউ দেয়ালে লিখছে “আমরা আবার ঘর বানাবো”। মানবিক সংগঠনগুলো সীমিত সুযোগেও খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে। এই সাহস ও মানবতার কারণেই গাজা এখনও টিকে আছে।

যুদ্ধের দুই বছর পরও গাজা শহর এক রক্তাক্ত, কিন্তু অদম্য প্রতীক হয়ে আছে। ধ্বংসের মধ্যেও জীবনের দাবি এখানে হার মানেনি। এখন সময় এসেছে বিশ্ববাসীর জেগে ওঠার—গাজার শিশুদের জন্য, মানবতার জন্য। কারণ, এক শহর নয়, পুরো মানবসভ্যতাই ধ্বংসের মুখে যদি নীরবতা চলতেই থাকে।

আরও পড়তে ক্লিক করুন

গাজা: দুই বছরের যুদ্ধ — প্রতিবেদনী

গাজা: দুই বছরের যুদ্ধ — এক ভূতুড়ে নগরের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা

কপিরাইট মুক্ত নিবন্ধ | তৈরি করা হয়েছে: আজ

দুই বছরের অবিরাম যুদ্ধ গাজা উপত্যকাকে আজ এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীকে পরিণত করেছে। একসময় প্রাণচঞ্চল গাজা শহর—যেখানে স্কুল, হাসপাতাল, বাজার আর শিশুদের হাসির শব্দে ভরে থাকত—আজ তা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অবিরাম বোমা হামলা, অবরোধ, খাদ্য ও জ্বালানির সংকটে এই শহর এখন পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে দুই বছর পূর্ণ হলেও শান্তির কোনো লক্ষণ নেই। এই সময়ের মধ্যে গাজা উপত্যকার অধিকাংশ অঞ্চলই ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার বহু ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। শহরজুড়ে ধ্বংসস্তূপ, পোড়া ভবন, এবং মৃত্যু ও ক্ষুধার ছায়া সর্বত্র বিলিয়ে আছে।

মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ চিত্র

গাজার পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একে “বসবাসের অনুপযোগী শহর” বললেও অত্যুক্তি হবে না। হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগই ভাঙচুরের শিকার বা বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবে কার্যত অচল হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা আলোর জন্য টর্চ কিংবা জেনারেটর ব্যবহার করে কাজ চালাচ্ছেন, কারণ স্থায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিশ্চিত। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক ওষুধ, অক্সিজেন কিংবা ব্যান্ডেজের মতো সরঞ্জাম কঠিন সংকটে আছে।

খাদ্যের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। আন্তর্জাতিক ডানার হিসেব অনুযায়ী, গাজার বিস্তৃত জনগোষ্ঠী অনাহার ও অপুষ্টির শিকার। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অনেক পরিবারই খাদ্য জোগাড় করতে পারছে না; মা-বাবারা নিজেদের খেয়ে সন্তানের জন্য কিছু রেখে দিচ্ছেন। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে গিয়েছে; নিরাপদ পানি ও স্বচ্ছতায় সমস্যা আছে, ফলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

ধ্বংসস্তূপে শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ হারিয়ে গেছে

গাজার স্কুলগুলোতে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। কোটি শিশুরা নিয়মিত পাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের প্রতিদিনের জীবন যুদ্ধ, আতঙ্ক ও ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করে কাটে—শিক্ষা বহু জায়গায় ব্যর্থ। অনেক শিশু মানসিক ও শারীরিক ট্রমার সম্মুখীন; ভবিষ্যৎ স্বপ্নগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে; আহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা লক্ষ সংখ্যা। বহু পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন; টিকে থাকা মানে ধ্বংসাবশেষে জীবন খোঁজা।

অবরোধ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার প্রভাব

গাজার মানুষ শুধু সরাসরি হামলার ক্ষত নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি অবরোধেও ভুগছে। সীমান্ত পাসেজ সীমিত থাকার ফলে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো অতি দুরূহ। যে পরিমাণ সাহায্য ঢুকছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য; সেখানে ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানি ও নির্মাণ সামগ্রীর ভিড়ে বড় ঘাটতি দেখা যায়।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে—রাজনীতির কারণে বড় শক্তিগুলো ভিন্নমত পোষণ করছে। ফলে নির্বিচারে আগ্রাসনের সামনে নিরীহ মানুষই সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অর্থনীতি ও পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

যুদ্ধের আগে গাজার অর্থনীতি বিকল্প হলেও টিকে ছিল—মৎস্য, ক্ষুদ্র ব্যবসা, কৃষি ইত্যাদি। কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং ব্যবস্থাও জটিলতায় পড়েছে। বাজারে প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া কঠিন—সিমেন্ট, লোহা বা নির্মাণ উপকরণ না থাকায় পুনর্গঠনের কাজ বাধাগ্রস্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি যুদ্ধ আজই শেষ হয় তবুও গাজা পুনর্গঠন করতে দশক বা তারও বেশি সময় লাগবে।

সারমর্ম: দুই বছরের ক্রমাগত সংঘাত গাজাকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, সামাজিক ও মানসিকভাবে হতবিহ্বল করে দিয়েছে। ধ্বংস, অরক্ষতা ও অপুষ্টির চিহ্ন এখানে গভীরভাবে ছাপ রেখেছে।

আশার এক অপরিসীম ঝিলিক

তবুও গাজার মানুষ হার মানেনি। ধ্বংসস্তূপের মাঝেও মানুষের সহমর্মিতা ও জীবনের আকাঙ্ক্ষা জীবন্ত রয়েছে—মানবিক সংস্থাগুলো সীমিত উপায়ে হলেও খাবার, ওষুধ ও আশ্রয় দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষ ক্ষুধা, শীত, অসুখ ও অনিশ্চয়তার মাঝেও নতুন করে টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছে।

গাজার এই দুই বছরের ইতিহাস শুধু একটি যুদ্ধের নয়; এটি আন্তর্জাতিক সমাজের মূল্যবোধ ও মানবতার পরিক্ষাও। বিশ্ববাসীর সজাগতা, কূটনৈতিক উদ্যোগ ও ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা ছাড়া গাজার ক্ষত সারানো সহজ হবে না।

লেখক সংযোজন: এই নিবন্ধটি কপিরাইট মুক্ত — সংবাদপত্র, ব্লগ বা সামাজিক মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যেতে পারে। অনুগ্রহ করে উৎস হিসেবে "কপিরাইট মুক্ত নিবন্ধ" উল্লেখ করুন।

© ২০২৫ — কপিরাইট মুক্ত নিবন্ধ • তৈরি করা হয়েছে আপনার অনুরোধে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ